শনিবার – ৭ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ –  ২৪শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শনিবার – ৭ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ –  ২৪শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘আওয়ামী লীগের সময় পাচার হয়েছে ১৮-২০ বিলিয়ন’

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা ও দলটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হলেও কারো ব্যবসায়িক কোনো হিসাব জব্দ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা ও দলটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হলেও কারো ব্যবসায়িক কোনো হিসাব জব্দ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।

তিনি বলেন, ‘‌আমরা কোনো বিজনেস অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করিনি। প্রাতিষ্ঠানিক কোনো হিসাবের লেনদেনে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে না। তারা (প্রতিষ্ঠানের মালিক) দোষী হলেও কোনো ব্যবসা আমরা আটকাচ্ছি না। তবে ব্যবসার মাধ্যমে যাতে কোনো টাকা পাচার না হয়, সেটা ঠিক রেখে আমরা ব্যবসা চলতে দিচ্ছি।’

গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা ‌বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর আরো বলেন, ‘আন্তঃমন্ত্রণালয় জটিলতা বাংলাদেশের বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা আমলাতান্ত্রিক বেড়াজালে জড়িত। এসব সমস্যা কাটাতে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। টাস্কফোর্সে প্রতিটা সংস্থার প্রতিনিধি আছে। অর্থ পাচার আইনের মধ্যেই টাস্কফোর্সকে সরকারি সংস্থা হিসেবে আইনগতভাবে স্বীকৃতি দেয়া হচ্ছে। এ সংস্থা সবার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে। এতে আমলাতান্ত্রিক বেড়াজাল দূর হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক দেশ থেকে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার সময়সীমা সম্পর্কে জানতে চান। এ প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, ‘টাকা ফেরত আসতে তিন থেকে পাঁচ বছর লাগবে। এটা নিয়ে কোনো “‍যদি” “‍কিন্তু” নেই। লন্ডন থেকে আসার পর (মার্চে) বলেছিলাম, আমরা ছয় মাসের মধ্যেই কিছু সম্পদ (বিদেশে পাচারকৃত) জব্দ দেখতে চাই। দুই মাসের মধ্যেই কিছু তো পেয়েছি। সামনে আরো পাব।’

এ সময় গভর্নর বলেন, ‘আওয়ামী লীগের শাসনামলে দেশ থেকে ১৮-২০ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার কোটি ডলার পাচার হয়েছে (বাংলাদেশী টাকায় ২ লাখ ১৯ হাজার ৬০০ থেকে ২ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা)। একজনই ৩৫০টি বাড়ি কিনেছেন। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এসব অর্থ পাচার করা হয়েছে।’

পাচার হওয়া অর্থ-সম্পদ উদ্ধারের উদ্যোগ বিষয়ে তিনি আরো বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বছরে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সর্বোচ্চ সম্পদ জব্দ করা, যাতে এগুলো অন্য কোথাও পাচার না হয়ে যায়। অর্থ পুনরুদ্ধারে অনেক আইনি জটিলতা আছে। আমাদের আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখেই কাজ করতে হবে। বিদেশের আইনের সঙ্গে আমাদের দেশের আইনের অনেক পার্থক্য আছে। আমাদের আগেই ভাবতে হবে, কার বিরুদ্ধে দেওয়ানি মামলা করব আর কার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা। দুটোকে একেবারে আলাদা রাখতে হবে। বিদেশের আদালতে তথ্যপ্রমাণ ঠিকভাবে সংগ্রহ করে (মামলা) পৃথক করতে হবে। এক মামলার সঙ্গে আরেক মামলা সাংঘর্ষিক হয়ে গেলে মামলা ওখানেই শেষ। এক পাও আর সামনে এগোবে না।’

বেশ কয়েক দিন ধরে কয়েকটি দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণ বিষয়ে আলোচনা চলছে ব্যাংক খাতে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, ‘সব ব্যাংক (দুর্বল) একসঙ্গে একীভূত করা হবে না। ধীরে ধীরে হবে। প্রথমে সরকার ব্যাংকগুলো অধিগ্রহণ করবে, এরপর বিদেশী বড় বিনিয়োগকারীদের এনে তাদের হাতে ছেড়ে দেয়া হবে। সরকারের মূল উদ্দেশ্য আমানতকারীদের স্বার্থ দেখা।’

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বিএফআইইউর বর্ষিক প্রতিবেদন তুলে ধরেন সংস্থাটির প্রধান কর্মকর্তা এএফএম শাহীনুল ইসলাম। তিনি জানান, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিএফআইইউতে ১৭ হাজার ৩৪৫টি সন্দেহজনক লেনদেন বা কার্যক্রম প্রতিবেদন জমা পড়েছে। এ সংখ্যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ২২ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেশি। একই সময়ে বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী, নিয়ন্ত্রক ও সরকারি অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে ১ হাজার ২২০টি তথ্য আদান-প্রদান করা হয়েছে। এ সংখ্যাও আগের বছরের তুলনায় ১৩ দশমিক ৯১ শতাংশ বেশি।

চলতি অর্থবছরের মে মাস পর্যন্ত বিএফআইইউতে ১৮ হাজার ২৫টি সন্দেহজনক লেনদেন ও ৯ হাজার ১০৫টি সন্দেহজনক কার্যক্রমের প্রতিবেদন জমা পড়েছে বলেও জানান শাহীনুল ইসলাম।

সংবাদ সম্মেলনে বিএফআইইউর পরিচালক মুহাম্মদ আনিছুর রহমান বলেন, ‘গত বছরের জুলাইয়ের পর বিএফআইইউর কাজ কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। সন্দেহজনক প্রতিবেদনও অনেক বেড়েছে। বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদন পাঠানো চার গুণ বেড়েছে। অর্থ পাচার ধরা ও উদ্ধার করা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এটা চলতেই থাকবে।