বুধবার – ৬ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ –  ২২শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বুধবার – ৬ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ –  ২২শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মুগ্ধতায় স্তব্ধ চট্টগ্রাম

বাঁশির নিঃশ্বাসে যেন খুলে গেল রাগ-রসের দরজা। চট্টগ্রামের থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে সুরের পর সুরে সৃষ্টি হলো এক মায়াময় সন্ধ্যা। বাঁশির মায়াজালে শ্রোতাদের এমনই এক অপার্থিব ভ্রমণে নিয়ে গেলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত, বরেণ্য বংশীবাদক ওস্তাদ আজিজুল ইসলাম।

শুক্রবার (২৫ জুলাই) চট্টগ্রামের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন সংগীত পরিষদের উদ্যোগে ওস্তাদ আজিজুল ইসলামের একক বংশীবাদন অনুষ্ঠান ‘বাঁশিতে সুর সন্ধ্যা’র আয়োজন করা হয়। আয়োজনের শুরু থেকেই যেন মিলনায়তন ভরে উঠল এক অদৃশ্য আবেশে; যেখানে শব্দ নয়, কথা বলেছে সুর আর সুর।

সন্ধ্যার মূল পরিবেশনা শুরু হয় রাগ জয়জয়ন্তী দিয়ে। তাতে বংশীর কোমল ধ্বনি যেন এক নিমিষেই শ্রোতাদের মন ছুঁয়ে যায়। এরপর একে একে পরিবেশন করেন ভূপালী, শ্যামকল্যাণ, শংকরা, ধুন, দরবারি কানাড়া, হংসধ্বনি এবং ঝিঁনঝটি। প্রতিটি রাগেই ছিল সুরের দীপ্তি, ভাবের গভীরতা এবং সাধনার ছাপ। কখনও যেন সুরে ছলকে উঠেছে বেদনা, কখনও বা ধ্বনিত হয়েছে অনন্ত আনন্দের অনুরণন।

আগত শ্রোতাবৃন্দ জানান, বাঁশির প্রতিটি ছোঁয়ায় ফুটে উঠেছে শাস্ত্রীয় সংগীতের অতল গাম্ভীর্য। হাউজপুল দর্শক-শ্রোতারা পেয়েছেন হৃদয়ের গভীরতম আবেগের অনুরণন। ওস্তাদ আজিজুল ইসলামের নিখুঁত আলাপ, বোল, ঝালা—সব মিলিয়ে ছিল এই এক পূর্ণাঙ্গ শ্রুতিমধুর অভিজ্ঞতা। তাঁর বাঁশি যেন শুধু সুর নয়, ছিল আত্মার ভাষা। এই মুগ্ধতা শ্রোতাদের হৃদয়ে বাজবে আরও বহুদিন।

তবলায় ছিলেন পলাশ দেব। যাঁর তালের ছন্দের কারুকাজ বাঁশির সুরকে করে তুলেছে আরও প্রাণবন্ত, আরও দীপ্তিময়। তানপুরায় ছিলেন মো. ফারুক, যাঁর ধ্বনি এই সম্পূর্ণ পরিবেশনার পটভূমি রচনায় সহায়তা করেছে নিদারুণভাবে, নিঃশব্দে।

অনুষ্ঠানজুড়ে উপস্থাপনায় ছিলেন আবৃত্তিশিল্পী অধ্যাপক দেবাশীষ রুদ্র। শুরুতে ফুলেল শুভেচ্ছায় শিল্পীকে বরণ করে নেন সংগীত পরিষদের শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ। অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে সংগীত পরিষদের সম্পাদক তাপস হোড় বলেন, ‘এই সন্ধ্যা শুধু একটি সংগীত পরিবেশনা নয়, এটি আমাদের সাংস্কৃতিক আত্মার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার একটি মুহূর্ত।’

প্রধান আলোচক কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, ‘ওস্তাদ আজিজুল ইসলামের সুরে আমরা পেয়েছি হারিয়ে যাওয়া এক শুদ্ধ রসায়ন, যা আজকের সময়েও আমাদের অন্তরে আলো জ্বালে।’

অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন— প্রাক্তন রোটারি গভর্নর ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বানিজ্য অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. তৈয়ব চৌধুরী, লতিফা সিদ্দিকা কলেজের অধ্যাপক শিমুল বড়ুয়া, রবীন্দ্রসংগীত বিশারদ শীলা মোমেন প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্যে সংগীত পরিষদের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুল মতিন বলেন, ’বংশী হাতে আজিজুল ইসলাম আমাদের মনে করিয়ে দিলেন, শাস্ত্রীয় সংগীত শুধু সাধনার বিষয় নয়—এটি আত্মার আরাধনা।’

রোটারি ক্লাব অব চিটাগাং এরিস্টোক্রেট, বেঙ্গল সিটি, সেন্ট্রাল, হেরিটেজ ও রিভারাইন হালদার সহায়তায় এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্টজন, সাংবাদিক, শিল্পী এবং রোটারি ক্লাবের প্রতিনিধিরা। প্রত্যেকে ওস্তাদ আজিজুল ইসলামের দীর্ঘ সংগীত সাধনার ভূয়সী প্রশংসা করে তাঁর সু-স্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন।