শনিবার – ৭ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ –  ২৪শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শনিবার – ৭ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ –  ২৪শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাজায় ত্রাণ—যেনো ‘সাগরে এক ফোঁটা পানি’, তাও ক্ষুধার্তদের চাপে ধস

ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, মানুষজন ভাঙা বেড়া ও মাটির বাঁধ পেরিয়ে ত্রাণকেন্দ্রে ঢুকছেন, গুলির শব্দে অনেকে দৌড়াচ্ছেন, মাথা নিচু করে ছুটছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ইসরায়েলি সেনারা গুলি ছুড়েছিল এবং মাত্র ৫০ জনকে একসঙ্গে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছিল বলে হুড়োহুড়ি শুরু হয়।

গাজার রাফাহ শহরে একটি নতুন ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। মার্কিন ও ইসরায়েলি সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) নামের একটি বিতর্কিত সংস্থা সোমবার থেকে গাজায় ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করলে হাজারো ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনি কেন্দ্রটিতে ভিড় করেন। মঙ্গলবার জনস্রোত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে নিরাপত্তা বেড়া টপকে ত্রাণকেন্দ্রে ঢুকে পড়েন বহু মানুষ। খবর আল জাজিরা।

ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, মানুষজন ভাঙা বেড়া ও মাটির বাঁধ পেরিয়ে ত্রাণকেন্দ্রে ঢুকছেন, গুলির শব্দে অনেকে দৌড়াচ্ছেন, মাথা নিচু করে ছুটছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ইসরায়েলি সেনারা গুলি ছুড়েছিল এবং মাত্র ৫০ জনকে একসঙ্গে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছিল বলে হুড়োহুড়ি শুরু হয়।

জিএইচএফ জানিয়েছে, অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে নিরাপত্তা ঝুঁকি দেখা দিলে তারা কিছুক্ষণের জন্য পিছিয়ে আসে। সংস্থাটি ৮,০০০ খাদ্য প্যাকেট বিতরণের দাবি করেছে। তবে সেখানে হামাস বাধা দিয়েছে বলেও জিএইচএফের দাবি। যদিও এ সংক্রান্ত কোনো প্রমাণ দেখায়নি। হামাসও এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

জিএইচএফের ত্রাণ বিতরণ পদ্ধতি এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার কড়া সমালোচনা করেছে জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা। তারা বলছে, এই পদ্ধতি মানবিক নীতিমালা লঙ্ঘন করে এবং ত্রাণকে রাজনৈতিক ও সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার ঝুঁকি তৈরি করে। জাতিসংঘের এক মুখপাত্র বলেন, রাফাহর ভিডিওগুলো ‘হৃদয়বিদারক’ এবং জাতিসংঘের নিজস্ব নীতি ও নিরাপদ পরিকল্পনা রয়েছে যা গাজার ২১ লাখ মানুষের কাছে কার্যকরভাবে ত্রাণ পৌঁছাতে পারে।

জিএইচএফ চারটি বিতরণকেন্দ্র স্থাপন করার পরিকল্পনা করেছে, যেখানে ইসরায়েলি সেনার নজরদারিতে মার্কিন নিরাপত্তাকর্মীরা ভেতরে নিরাপত্তা দেবে। সেখানে যেতে ফিলিস্তিনিদের পরিচয় যাচাই ও হামাস-সংশ্লিষ্টতার স্ক্রিনিংয়ের মুখোমুখি হতে হবে। জাতিসংঘ স্পষ্ট জানিয়েছে, নিরপেক্ষতা, মানবিকতা ও স্বাধীনতার নীতিমালা লঙ্ঘনকারী কোনো পদ্ধতিতে তারা অংশ নেবে না।

এদিকে ইসরায়েল গাজায় ত্রাণ প্রবেশে সাময়িক শিথিলতা আনলেও বিতরণে এখনো বড় বাধা হয়ে আছে নিরাপত্তা সংকট, লুটপাটের আশঙ্কা ও সমন্বয়ের অভাব। জাতিসংঘ সতর্ক করেছে, গাজায় দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি মোকাবেলায় বর্তমান সহায়তা ‘সাগরে এক ফোঁটা পানির সমান’, যেখানে প্রায় ৫ লাখ মানুষ চরম খাদ্যসংকটে রয়েছে।

ইসরায়েল ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে। এরপর থেকে ৫৪ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সাম্প্রতিক হামলায় গত ১০ সপ্তাহে নিহত হয়েছেন প্রায় ৩,৯০০ জন।