শনিবার – ৭ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ –  ২৪শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শনিবার – ৭ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ –  ২৪শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কেন জনপ্রিয় হচ্ছে ক্যাপসুল হোটেল

বসবাস বা ভ্রমণ বেশ ব্যয়বহুল। ইদানিং সাধারণ হোটেলের ভাড়া আকাশচুম্বী হয়ে ওঠায় তরুণদের লক্ষ্যে সেখানে নির্মিত হচ্ছে ক্যাপসুল হোটেল। তাই খরুচে হোটেলের বদলে সমাধান হয়ে উঠা ক্যাপসুল হোটেলের জনপ্রিয়তা বাড়ছে দিনকেদিন।

গত নভেম্বরে বোট কুয়ে এলাকার নদী তীরবর্তী বিনোদন জোনে চালু হয় কিউব সোশ্যাল। এ হোটেলের দ্বিতীয় তলায় রয়েছে পানীয় জোন, যেখান থেকে নদীর দৃশ্য দেখা যায়। এখানে অতিথিদের জন্য বিনামূল্যে কফি পান ও আড্ডার সুযোগ রয়েছে।

এখানকার ক্যাপসুল ইউনিটগুলোয় মূল্যবান জিনিসপত্র রাখার লকার ও চার্জিং সকেট রয়েছে। বিনামূল্যে দেয়া হয় টুথব্রাশ, আই মাস্ক ও নাক ডাকার শব্দরোধী টেপ। প্রারম্ভিক ভাড়া ৭৫ সিঙ্গাপুর ডলার বা প্রায় ৫৮ ডলার। দামের দিক থেকে সবচেয়ে সস্তা না হলেও কিউব সোশ্যাল নিরাপত্তা ও আরামের বাড়তি সুবিধা দেয়। যা এখন এশীয় দেশগুলোর ভ্রমণকারীদের কাছে বেশ জনপ্রিয়।

উচ্চ ভাড়া, সীমিত বিকল্প

সিঙ্গাপুর পর্যটন বোর্ডের তথ্য মতে,  কোভিড-১৯ মহামারির পরে সিঙ্গাপুরে আন্তর্জাতিক পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে কয়েকগুণ। ২০২৪ সালে সিঙ্গাপুরে প্রতি হোটেল কক্ষের গড় ভাড়া দাঁড়িয়েছে ২৭৬ সিঙ্গাপুর ডলার, যা ২০১৯ সালের তুলনায় প্রায় ২৫ শতাংশ বেশি।

এই চড়া ভাড়ার কারণে একা বা স্বল্প বাজেটের পর্যটকরা খুঁজছেন নতুন বিকল্প। ক্যাপসুল হোটেল এই চাহিদার জবাব দিচ্ছে নিখুঁতভাবে।

কী এই ক্যাপসুল হোটেল?

ক্যাপসুল হোটেল মূলত ক্ষুদ্রাকৃতির ঘুমানোর স্থান (পড)– যেখানে একজন পর্যটকের বিশ্রাম, চার্জিং, নিরাপত্তা এবং সামান্য মালপত্র রাখার ব্যবস্থা থাকে। এটি জাপানে প্রথম শুরু হলেও এখন সিঙ্গাপুর, হংকং, ব্যাংককসহ বিভিন্ন শহরে জনপ্রিয়।

জনপ্রিয়তার মূল কারণ: সাশ্রয়ী ভাড়া

ক্যাপসুল হোটেলে প্রতি রাতের ভাড়া গড়ে ৭০-১০০ সিঙ্গাপুর ডলার। ‘কিউব সোশ্যাল’ হোটেলে প্রতি রাত মাত্র ৭৫ ডলারে ঘুমানোর সুযোগ মিলছে।

আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর সেবা

প্রতিটি পডে রয়েছে ব্যক্তিগত লাইট, চার্জিং সকেট, বিনামূল্যে টুথব্রাশ, আই মাস্ক, এমনকি নাক ডাকার শব্দ রোধক টেপ। কিছু হোটেলে বায়োমেট্রিক লকারও রয়েছে।

সামাজিক পরিবেশ

অনেক ক্যাপসুল হোটেলে লাউঞ্জ, পানীয় কর্নার, কফি বার, এমনকি লাইভ মিউজিক পারফরম্যান্সের আয়োজন থাকে। অতিথিরা একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পান, গড়ে ওঠে বন্ধুত্ব।

অবস্থানগত সুবিধা

এই হোটেলগুলো সাধারণত শহরের কেন্দ্রস্থলে বা ট্রানজিট এলাকায় গড়ে ওঠে। ফলে যাতায়াত ও ঘোরাঘুরি সহজ হয়।

তরুণদের প্রাধান্য

বিশেষ করে ডিজিটাল নোম্যাড, ব্যাকপ্যাকার ও একা ভ্রমণকারীরা এসব হোটেলের প্রধান গ্রাহক। এদের পছন্দ প্রযুক্তিনির্ভরতা, কম খরচে ভিন্ন অভিজ্ঞতা এবং সামাজিক সংযোগ।

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিশ্বের আরও ব্যয়বহুল শহরগুলোতে ক্যাপসুল হোটেল হবে ভবিষ্যতের সমাধান। সাশ্রয়ী, নান্দনিক ও স্বচ্ছন্দ এই ঘুমের ব্যবস্থা আগামী দিনে পর্যটন শিল্পে নতুন মাত্রা যোগ করবে।

সিঙ্গাপুরে ক্যাপসুল হোটেলের উত্থান শুধু একটি বাজারগত পরিবর্তন নয়, বরং এটি একটি জীবনধারাগত রূপান্তর। জায়গা কম, ব্যয় বেশি—এই বাস্তবতায় ক্যাপসুল হোটেল দেখিয়ে দিচ্ছে, কম জায়গায়ও হতে পারে বড় অভিজ্ঞতা।